পড়ালেখা বা চাকরির পাশাপাশি IELTS এর প্রস্তুতি।

পড়ালেখা বা চাকরির পাশাপাশি কীভাবে আইইএলটিএসের প্রস্তুতি নেব!

‘মাত্র ১ ঘণ্টায় আইইএলটিএসের প্রস্তুতি নিন!’

এমন চটকদার শিরোনাম দিয়েও লেখাটা শুরু করা যেত। পড়ালেখা, চাকরি বা খণ্ডকালীন কাজ, যা কিছু নিয়েই আপনার ব্যস্ততা থাকুক না কেন, প্রতিদিন ১ ঘণ্টা সময় দিলে সত্যিই আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য দারুণ একটা প্রস্তুতি হয়ে যাবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্টিং সিস্টেমকে সংক্ষেপে বলা হয় আইইএলটিএস। এটি ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পরীক্ষা। বিদেশে উচ্চশিক্ষা, চাকরি বা সম্মেলন-প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়াসহ নানা কারণেই আপনার আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। অনেকে ছাত্রজীবনেই এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কেউ কেউ ভাবেন, চাকরির পাশাপাশি একটু একটু করে প্রস্তুতিটা নিয়ে ফেলব। কিন্তু ‘শুরুটা করি করি করেও করা হচ্ছে না’—এই দলভুক্ত মানুষের সংখ্যা নিশ্চয়ই কম নয়।

কথা হচ্ছিল ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষক ও আইইএলটিএস প্রশিক্ষক সাব্বির সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যেকোনো পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি পর্বটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়া কিংবা সাধারণ প্রস্তুতিতে আইইএলটিএসে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করা বেশ কঠিন বলা যায়। আইইএলটিএস কিন্তু আপনি কতটা ইংরেজি জানেন, সেই পরীক্ষা নয়। বরং এখানে পরীক্ষা করা হয়, আপনি কতটা কার্যকরভাবে ইংরেজি ভাষার প্রয়োগ করতে পারছেন।’

নানা ব্যস্ততার পাশাপাশি একটু একটু করে যাঁরা আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলতে চান, তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শ দিলেন সাব্বির সরকার।

শুরুতেই পরীক্ষাটি সম্পর্কে জানুন: আইইএলটিএস পরীক্ষা দুই ধরনের হয়ে থাকে—একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেইনিং। পরীক্ষার চারটি অংশ—লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং ও স্পিকিং। লিসেনিং ও স্পিকিং অংশটি দুই ধরনের পরীক্ষায় একই রকম হয়। তবে রাইটিং ও রিডিংয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকে। কোন ধরনের পরীক্ষা আপনার প্রয়োজন, পরীক্ষার নিয়মকানুন কী, শুরুতে এসব সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। অনলাইনেই এ–সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য পাবেন। ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিও আছে। এ ছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইটেও বলা আছে বিস্তারিত। ‘সবাই আইইএলটিএস পরীক্ষা দিচ্ছে, তাই আমারও দেওয়া উচিত’—এমন ভাবা যাবে না। কেন আপনি পরীক্ষা দিচ্ছেন? আগে নিজে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখুন। জেনে-বুঝে চর্চা শুরু করুন।

প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় পড়ুন: পড়ার বা কাজের ব্যস্ততা সব সময়ই থাকবে। আজ না কাল করে করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকলে আদতে কখনোই আপনার প্রস্তুতিটা মনমতো হবে না। তাই সব ব্যস্ততার ফাঁকেই প্রতিদিন এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রাখুন। সময়টা আইইএলটিএসের প্রস্তুতির জন্য ব্যয় করুন।

প্রতিদিন ইংরেজিতে কথা বলার চর্চা করুন: স্পিকিং অংশের জন্য যতটা সম্ভব ইংরেজিতে কথা বলার জড়তা কাটাতে হবে। বন্ধুবান্ধব কিংবা সহকর্মীদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলুন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা অফিসের প্রেজেন্টেশন কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে ইংরেজিতে নিজেকে উপস্থাপন করার সুযোগ পেলে হাতছাড়া করবেন না। চেষ্টা করুন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইংরেজিতে উপস্থাপনার অভিনয় করুন। নিজেই নিজের কথা রেকর্ড করে রাখুন। পরে সেই রেকর্ড শুনে ভুলগুলো খুঁজে বের করুন।

শেখা ও চর্চা: আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য যে হাজার হাজার নতুন শব্দ শিখতে হবে—বিষয়টি এমন নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়তে যত ইংরেজি শব্দ শেখার সুযোগ হয়, আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য তার চেয়ে আরও কিছু শব্দ বেশি শিখে রাখা দরকার। ইংরেজি শব্দের নানাবিধ ব্যবহার, বিপরীত শব্দ, সমার্থক শব্দের ওপর জোর বাড়াতে হবে। এর বাইরে সুন্দরভাবে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য কিছু শব্দ শিখতে পারেন। নতুন শেখা শব্দগুলো ব্যবহার না করলে ভুলে যাবেন। তাই প্রতিদিনই নতুন নতুন শব্দের চর্চা করুন।

মক টেস্টে অংশ নিন: অনলাইন বা অফলাইন মক টেস্টে অংশ নিন। ঘড়ি ধরে, সময় মেনে পরীক্ষায় অংশ নিন। কীভাবে কোন প্রশ্নের সমাধান করছেন, তা বারবার চর্চা করুন। কোন কোন বিষয়ে ভুল হচ্ছে, গভীরভাবে খেয়াল করতে হবে। মক টেস্টে প্রথম দিকে হয়তো খারাপ ফলাফল আসতে পারে। ধৈর্য হারালে চলবে না, ধীরে ধীরে অগ্রগতি আসবে।

লিখুন: আইইএলটিএস প্রস্তুতির অংশ হিসেবে লেখার অভ্যাস করতে হবে। লেখালেখি একটি চর্চার বিষয়। সাধারণ একটি বাক্যকে নানাভাবে লেখার কৌশল শিখতে হবে। মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে।

পড়ুন, পড়ুন আর শুনুন: বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কর্মস্থলে যাওয়ার পথে চট করে আজকের ইংরেজি পত্রিকাটা পড়ে নিতে পারেন। ব্যাগে রিডার্স ডাইজেস্ট বা টাইম ম্যাগাজিনের মতো সুপাঠ্য ইংরেজি সাময়িকী ও জার্নাল রেখে যানজটের সময় পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন। এ ছাড়া স্মার্টফোনের মাধ্যমেও এখন ইংরেজি পডকাস্ট ও অডিও লেকচার শোনার সুযোগ আছে। এর মাধ্যমে লিসেনিং অংশে মনোযোগ বাড়ানোর চর্চা হবে।

Previous Post Next Post